পটুয়াখালী প্রতিনিধি:-
পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার আলোচিত “জুলাই শহীদ কন্যা লামিয়া ধর্ষণ” মামলায় তিন আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এর মধ্যে সাকিব মুন্সী ও সিফাত মুন্সীকে ১৩ বছর করে এবং ইমরানকে ১০ বছর বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
বুধবার (২২ অক্টোবর) সকালে পটুয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক নিলুফার শিরিন এই রায় ঘোষণা করেন। দণ্ডপ্রাপ্তরা ঘটনার সময় অপ্রাপ্তবয়স্ক থাকায় শিশু আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ সাজা প্রদান করা হয়।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০২৫ সালের ১৮ মার্চ সন্ধ্যায় দুমকি উপজেলার পাংগাশিয়া ইউনিয়নে নিজ বাড়ি থেকে নানা বাড়ি যাওয়ার পথে শহীদ জসিম উদ্দিনের কন্যা লামিয়া (১৮) সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন। ঘটনার পর তিনি নিজেই বাদী হয়ে তিনজনকে আসামি করে দুমকি থানায় মামলা দায়ের করেন। পুলিশ তদন্ত শেষে তাদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে।
পরবর্তীতে ধর্ষণের মানসিক আঘাতে ভেঙে পড়ে লামিয়া ২৬ এপ্রিল রাজধানীর শেখেরটেক এলাকার ভাড়া বাসায় গলায় ফাঁস দেন। হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
দীর্ঘ সাক্ষ্যগ্রহণ ও যুক্তিতর্ক শেষে আদালত আজ রায় ঘোষণা করেন।
পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন,
“আমরা মামলাটি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। আদালত ন্যায়বিচার দিয়েছেন।”
অন্যদিকে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও জেলা জজ আদালতের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মজিবুর রহমান টোটন বলেন,
“এই মামলার রায় একটি বার্তা দেবে—যে কেউ অপরাধ করলে তাকে শাস্তি পেতেই হবে, সে যত প্রভাবশালী হোক না কেন।”
পুলিশ জানায়, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারান লামিয়ার বাবা শহীদ জসিম উদ্দিন। বাবার কবর জিয়ারত শেষে ফেরার পথে ১৮ মার্চ লামিয়াকে তুলে নিয়ে নির্জন বাগানে ধর্ষণ করা হয়। আসামিরা সেই দৃশ্য মোবাইলে ধারণ করে এবং তা প্রকাশের ভয় দেখিয়ে বিষয়টি কাউকে না জানাতে চাপ দেয়।
এই ঘটনায় লামিয়া নিজেই মামলা করেন তিনজনের বিরুদ্ধে। দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে আদালত আজ রায় ঘোষণা করেন।
এ রায়ের পর আদালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত সাধারণ মানুষ ও মানবাধিকারকর্মীরা সন্তোষ প্রকাশ করেন। আসামিদের বয়স কম হওয়ায় তাদের যশোর কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানো হয়েছে। প্রাপ্তবয়স্ক হলে তারা সাজা ভোগ করতে হবে।